বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না পশ্চিমবাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে। সব সময় যেন ওত পেতে বসে রয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী কী বলেন, সে কথা শোনার জন্য। আর তার পরই তার একটা জবাব তৈরি করে কখনও টুইট করেন, কখনও ভিডিও বার্তা পোস্ট করেন, কখনও বা সরাসরি নবান্নে চিঠি পাঠিয়ে দেন। আর তাঁর সেইসব মন্তব্য নিয়ে বিব্রত হতে হয়ে রাজ্য সরকার, মুখ্যমন্ত্রী এবং শাসক দলকে। শুরু হয়ে যায় রাজনৈতিক বিতর্ক। বেশির ভাগ সময়ই শাসক দল রীতিমতো চাঁছাছোলা ভাষায় আক্রমণ শানায় রাজ্যপালকে। এমনকী, কোনও কোনও সময় মুখ্যমন্ত্রীও মুখ খুলতে বাধ্য হন। তবুও থামানো যায়নি রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, যথেষ্ট ভাবনাচিন্তা করেই জগদীপ ধনকড় মন্তব্য করে চলেছেন। তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলেও কোনও কিছুকেই তিনি গুরুত্ব দেন না। তিনি জানেন, বিতর্কের বাইরে তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার বা শাসক দলের কিছু করার নেই। বরং সুযোগ পেলেই সরকার এবং শাসক দলের বিচ্যুতির কথা সকলকে জানিয়ে দিয়ে চলেছেন। সেই কারণেই শাসক দল তৃণমূলের তরফে বারবার তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আচরণ করার অভিযোগ তোলা হয়ে থাকে। তবু অদম্য জগদীপ ধনকড়। যেমন, এবার তিনি আশ্রয় নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর একটি মন্তব্যের। সেই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি টুইটে লিখেছেন, ‘সংবিধানের প্রকৃত ভাবধারায় আমরা উভয়ই সাংবিধানিক কর্মী হিসেবে রাজ্যের উন্নতির জন্য কাজ করব। এ ভাবেই চেষ্টা করব জনগণের দুর্ভোগ দুর্দশা প্রশমন করতে।’
উল্লেখ্য, দুটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যপাল এই মন্তব্য করেছেন। প্রথম ঘটনাটি হল, ২১ জুলাই। ওইদিন তৃণমূলের শহিদ দিবসের ভার্চুয়াল সভায় মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘ম্যায় হুঁ না?’ দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ২৮ জুলাই শুক্রবার। ওইদিন ছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস। তার আগে বৃহস্পতিবার রাতে তৃণমূলের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর একটি ছবি টুইট করা হয়। তার নীচে রোমান হরফে লেখা হয়, ‘ম্যায় হুঁ না?’ বলা বাহুল্য, এই দুটি ঘটনা চোখ এড়ায়নি রাজ্যপালের। এর পরই তিনি ওই মন্তব্যের জবাব দিতে তৈরি হয়ে যান। শনিবার টুইটে লেখেন, ‘ম্যায় হুঁ না–র প্রতিক্রিয়ায় আমি লিখলাম ম্যায় ভি হুঁ না!’
আর, রাজ্যপালের এই মন্তব্যটি নির্বিষ নয়, বরং এই মন্তব্যকে অতিরিক্ত রাজনৈতিক বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তা ছাড়া রাজ্যপালের ওই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলের পাশাপাশি অনলাইনেও বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছে। যদিও শাসক দলের তরফে এদিন রাজ্যপালের মন্তব্যের কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। আর যেহেতু মন্তব্যটি মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে করা হয়েছে, তাই সরকার বা নবান্নের তরফেও কোনও বক্তব্য প্রকাশ্যে জানানো হয়নি। তবে সূত্রের খবর, রাজ্যপালের এই মন্তব্যে সংবাদ মাধ্যমের সামনে কিছু না বললেও মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে তীব্র অসন্তোষ গোপন রাখেননি।